বিদেশে পড়াশোনার সঙ্গে কাজের সুযোগ – বিদেশে নিজ অর্থ খরচে আবার স্কলারশিপে পড়া যায়। অনেকেরই স্বপ্ন থাকে বিদেশে পড়াশোনার। উচ্চতর ডিগ্রি বা গবেষণার জন্য অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমান। তবে সংশ্লিষ্ট দেশের সংস্কৃতি, খরচ, শিক্ষার মান যাচাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া দরকার। কানাডার শিক্ষা ও প্রযুক্তি কোম্পানি অ্যাপ্লাইবোর্ডের চিফ এক্সপেরিয়েন্স অফিসার কারুন কানদই উচ্চশিক্ষার গন্তব্যের জন্য পাঁচটি দেশের কথা বলেছেন। কেন এসব দেশ উচ্চশিক্ষার গন্তব্য হতে পারে, তা-ও জানিয়েছেন কারুন কানদই। সেগুলো সংক্ষেপে শিক্ষার্থীদের জন্য তুলে ধরা হলো
বিদেশে পড়াশোনার সঙ্গে কাজের সুযোগ
১। অস্ট্রেলিয়া—
উচ্চশিক্ষার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় দেশ অস্ট্রেলিয়া। বিদেশে পড়তে যাওয়ার ক্ষেত্রে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের পছন্দের শুরুতেই থাকে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির ক্যানবেরা, মেলবোর্ন, সিডনি, ব্রিসবেন, অ্যাডিলেড, পার্থ শহরে রয়েছে বিশ্বের প্রথম সারির অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় পড়তে যাওয়ার ভিসা পাওয়া তুলনামূলক সহজ। পাশাপাশি দেশটিতে পড়াশোনার সঙ্গে আছে খণ্ডকালীন (পার্ট টাইম) কাজের সুযোগ।
২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ১ লাখ ৭৯ হাজার আবেদনপত্রের মধ্যে ভিসা দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থীকে। করোনা–পরবর্তী দক্ষতা ও আর্থিক ঘাটতি পূরণে শিক্ষার্থী ভিসা মঞ্জুরের হার রেকর্ড পরিমাণ বেড়েছে।
অস্ট্রেলিয়ায় নতুন অর্থবছর শুরু হয় ১ জুলাই থেকে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটির সব খাতের পাশাপাশি অভিবাসন খাতেও এসেছে পরিবর্তন। প্রায় দুই বছর আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারের সঙ্গে যোগাযোগবিচ্ছিন্ন-প্রায় হওয়ার দরুন গত বছর থেকে দেশটির শ্রমবাজারে সৃষ্ট ঘাটতি কমাতে নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা ভিসা ক্যাটাগরিতে নানা সুবিধা পাবেন।
শিক্ষার্থীদের কর্মঘণ্টা বেড়েছে। করোনা সংকটের কারণে শিক্ষার্থী ভিসাধারীদের কর্মঘণ্টার সীমাবদ্ধতা তুলে নেওয়া হয়েছিল। তবে গত অর্থবছরে এ সুবিধা বন্ধের কথা থাকলেও এর পরিবর্তে আগের সপ্তাহে ২০ কর্মঘণ্টাকে বাড়িয়ে ২৪ ঘণ্টা করা হয়েছে।
শিক্ষা সমাপনী-পরবর্তী ভিসা ৪৮৫ টেম্পোরারি গ্র্যাজুয়েট ভিসারও মেয়াদ বাড়ানো যাবে। এ ভিসাধারী প্রার্থীরা স্নাতক পাস হলে দুই বছরের বদলে চার বছর, স্নাতকোত্তর হলে তিন বছরের পরিবর্তে পাঁচ বছর এবং ডক্টরাল হলে ছয় বছর বসবাস করতে পারবেন অস্ট্রেলিয়ায়।
বিদেশে পড়াশোনার সঙ্গে কাজের সুযোগ
২। কানাডা—
বিদেশে পড়তে যাওয়ার জন্য অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য হয়ে উঠছে কানাডা। আন্তর্জাতিক পড়ুয়াদের জন্য সহজ অভিবাসননীতি এর মূল কারণ। আর দেশটির বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণার সুযোগও পাওয়া যায় অনেক বেশি। একটি সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রতি পাঁচ শিক্ষার্থীর মধ্য চারজনই কানাডায় পড়তে যেতে আগ্রহী।
কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ক্যাম্পাসে বা বাইরে খণ্ডকালীন কাজ করার জন্য ওয়ার্ক পারমিটের প্রয়োজন নেই। শিক্ষার্থীরা খণ্ডকালীন কাজ করতে পারেন। শিক্ষার্থীরা তাদের একাডেমিক প্রোগ্রাম চলাকালে সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা কাজ করতে পারবেন। একাডেমিক বিরতির সময় পূর্ণসময় কাজ করার সুযোগ তো আছে। স্নাতক শেষে বা পড়াশোনা শেষ হওয়ার পরে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য দেশটির জনপ্রিয় পোস্ট-গ্রাজুয়েশন ওয়ার্ক প্রোগ্রামের (PGWP) জন্য আবেদন করতে পারেন।
৩। যুক্তরাজ্য—
বিশ্বের বড় বড় খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে যুক্তরাজ্যে। শিক্ষার গুণগত মানের দিক থেকে চিন্তা করলে অনেক এগিয়ে আছে ঋষি সুনাকের দেশ। একাডেমিক ঐতিহ্যের জন্য যুক্তরাজ্যের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত। কিছু প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় আছে দেশটিতে। বিভিন্ন কোর্স আর প্রোগ্রামের কারণে যুক্তরাজ্যের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। সাংহাইভিত্তিক একাডেমিক র্যাঙ্কিং অব ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটিজে (ARWU) যুক্তরাজ্যের ৬৩টিরও বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জায়গা করে নিয়েছে। শিক্ষার্থীদের পছন্দের শহরগুলোর কথা এলে লন্ডন, গ্লাসগো ও এডিনবার্গ সেরা পছন্দ।
পড়াশোনার পাশাপাশি বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য কাজের সুযোগও আছে দেশটিতে। পূর্ণ সময়ের বিদেশি শিক্ষার্থীদের অধ্যয়নের শর্তে প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত এবং কোর্স বিরতির সময় বা একাডেমিক প্লেসমেন্টের অংশ হিসেবে পার্ট টাইম কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পড়া শেষে গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থীদের ওয়ার্ক ভিসায় দুই বছর পর্যন্ত কাজ করার সুযোগ দেয় দেশটি।
বিদেশে পড়াশোনার সঙ্গে কাজের সুযোগ
৪। আয়ারল্যান্ড—
বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য অন্যতম আকর্ষণীয় দেশ আয়ারল্যান্ড। অনেকে এই দেশের শীর্ষ সারির শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা লাভ করতে চান। পাশাপাশি অনেক সুযোগ-সুবিধাও মেলে এই দেশে। বিশ্বমানের শিক্ষাব্যবস্থা, অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য বিখ্যাত আয়ারল্যান্ড। একাডেমিক শ্রেষ্ঠত্ব এবং ব্যতিক্রমী জীবনমানের কারণেও দেশটি শিক্ষার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো র্যাঙ্কিংয়ে দেশটির ৩ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জায়গা করে নেয়।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো উচ্চমানের শিক্ষা, ব্যাপক গবেষণার সুযোগ এবং বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতির কারণে অনেকে কাছে পড়তে যাওয়ার জন্য আয়ারল্যান্ড শীর্ষে। ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিন, ইউনিভার্সিটি কলেজ ডাবলিন এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ কর্ক দেশটি বহুল পরিচিত বিশ্ববিদ্যালয়। সংস্কৃতি, সমৃদ্ধ ইতিহাস ও আকর্ষণীয় শহরগুলোর কারণে বিদেশি ছাত্ররা দেশটিতের ভিড় জমান। ইংরেজিভাষী জনসংখ্যা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্কের কারণে শিক্ষার্থীদের কাছে দেশটি বেশ আকর্ষণীয়।
কানাডা, যুক্তরাজ্যের মতো এখানে পড়াশোনার ফাঁকে প্রতি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত খণ্ডকালীন কাজের সুযোগ আছে। গ্রীষ্ম ও শীতের ছুটিতে প্রতি সপ্তাহে ৪০ ঘণ্টা পর্যন্ত খণ্ডকালীন কাজ করতে পারেন শিক্ষার্থীরা। এ ক্ষেত্রে বৈধ অভিবাসন স্ট্যাম্প টু প্রয়োজন। পড়া শেষে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের স্নাতকের পর ১২ থেকে ২৪ মাস কাজ করার অনুমতি ও সুযোগ আছে। বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন এবং কর্মজীবনের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্যই এ সুযোগ দেওয়া হয়।
৫। যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্বের একাধিক বিশ্ববিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষালাভের সুযোগও বেশি দেশটিতে। মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিস্তৃত একাডেমিক অফারের কারণে যুক্তরাষ্ট্র বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে অত্যন্ত পছন্দের গন্তব্য। উদ্ভাবন, গবেষণা প্রতি প্রতিশ্রুতি, একাডেমিক এবং কর্মজীবনে দক্ষতা অর্জনের অবারিত সুযোগের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে সুপরিচিত। নিউইয়র্ক, ক্যালিফোর্নিয়া এবং টেক্সাসের অঙ্গরাজ্যর বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছে অন্যতম জনপ্রিয় গন্তব্য।
এফ-১ (F-1) বা এম-১ (M-1) ভিসাসহ নির্দিষ্ট কিছু শর্তে আন্তর্জাতিক ছাত্ররা কাজের সুযোগও পান। এ ছাড়া দেশটির কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকার অনুমোদিত ক্যাম্পাসে জব বা ক্যাম্পাসে চাকরির সুযোগ মেলে। তথ্যসূত্র: এডুকেশন ডট কম ও ইন্ডিয়া টুডে
বিদেশে উচ্চ শিক্ষা সম্পর্কিত আরো তথ্য জানতে ভিজিট করুন এই লিংকে।