Reasons for Lengthening the BCS Recruitment Process

The BCS Recruitment Process in our country takes a lot of time to complete. The target of most students in our country is to be a BCS cadre. But, they have to wait for a long time to get the final result of this BCS examination. Many of them loss their interest for lengthy BCS Recruitment Process. The article is written in Bengali for the well understanding of the readers.

BCS Recruitment Process

পৃথিবীর অনেক দেশে চার বছরে এক সরকারের মেয়াদ শেষে আরেক সরকার আসে। বাংলাদেশে উচ্চমাধ্যমিক শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে চার বছরে স্নাতক শেষ করা যায়। অথচ চার বছরেও একটা বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়া শেষ হয় না। পৃথিবীর আর কোনো দেশে সরকারি চাকরি নিয়োগের পরীক্ষায় এত দীর্ঘ সময় লাগে না। এই দীর্ঘসূত্রতা কমানো জরুরি। এ জন্য বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়া থেকে শুরু করে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সংস্কার ও জবাবদিহি প্রয়োজন।

তৃতীয় বিশ্বে সরকারি চাকরি সব সময় কাঙ্ক্ষিত। বাংলাদেশে একেকটি বিসিএসে এখন ৪ থেকে ৫ লাখ তরুণ অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছর। বয়সসীমা বাড়লে আবেদনকারী আরও বাড়বে। ১৯৮২ সাল থেকে শুরু হওয়া বিসিএসগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, প্রতিটি বিসিএসেই পরীক্ষা হয়েছে এক বছর, নিয়োগ হয়েছে আরেক বছর। যত দিন গেছে, দীর্ঘসূত্রতা বেড়েছে।

গত ২১ বছরের ২২টি বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি, লিখিত ও চূড়ান্ত পরীক্ষার ফলাফলের সময়সূচি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৩৫তম বিসিএসে সবচেয়ে কম সময় নিয়েছিল পিএসসি। মাত্র দেড় বছরে এই বিসিএসের চূড়ান্ত ফল হয়েছিল। কিন্তু গত কয়েক বছরে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক—এ তিনটি ধাপের পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করতেই তিন থেকে চার বছর সময় নিচ্ছে পিএসসি। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও পুলিশি যাচাইয়ের পর গেজেট প্রকাশ করেতে ৬ থেকে ১০ মাস লাগছে। পুরো প্রক্রিয়া শেষ করে যোগ দিতে একটা বিসিএসের পেছনেই চার থেকে পাঁচ বছর চলে যাচ্ছে একজন তরুণের।

BCS Recruitment Process

২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে সোহরাব হোসাইন পিএসসির চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়ে এক বছরের মধ্যেই একটা বিসিএস প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলেছিলেন। অথচ তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে ৪১তম বিসিএসের প্রক্রিয়া শেষ করে যোগদানে সময় লেগেছে সাড়ে চার বছর। ৮ অক্টোবর এই চেয়ারম্যানসহ পিএসসির ১২ জন সদস্য পদত্যাগ করেছেন। তবে যাঁরাই নতুন দায়িত্ব নিক, তাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে দীর্ঘসূত্রতা কমানো। এ জন্য তাঁরা অতীতের বিসিএসগুলোর সময় বিশ্লেষণ করতে পারেন।

২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ৪১তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল পিএসসি। এ বছরের ২১ মার্চ সেই বিসিএসের গেজেট প্রকাশ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কোনো বিসিএসের ফল প্রকাশে এই দীর্ঘসূত্রতা গোটা বিশ্বে রেকর্ড হতে পারে।

২০২১ সালে চিকিৎসকদের জন্য বিশেষ ৪২তম বিসিএসে লিখিত পরীক্ষা ছিল না। প্রিলিমিনারির পর শুধু মৌখিক পরীক্ষা দিয়েই নিয়োগ শেষ হয়েছে। এরপর ২০২০ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। তিন বছর পর ২০২৩ সালের ২৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত উত্তীর্ণদের নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। কিন্তু ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো তাঁদের গেজেট প্রকাশ করা হয়নি। অপেক্ষায় থাকতে থাকতে এই বিসিএসের দুই হাজারের বেশি প্রার্থী ক্লান্ত। রোজ তাঁরা জনপ্রশাসনে খোঁজ নেন কবে গেজেট হবে। কিন্তু কেউ সদুত্তর দিতে পারেন না। অভিযোগ উঠেছে, গত ৫ আগস্টের সরকার পরিবর্তনের পর ফের যাচাই-বাছাইয়ের কথা তুলে গেজেট বিলম্বিত করা হয়েছে। এ যেন রাজনৈতিক রং খোঁজার সেই পুরোনো অপচর্চা।

অন্যদিকে ৫ আগস্টের পটপরিবর্তনের পর পিএসসির অচলাবস্থায় ৪৪, ৪৫, ৪৬—সব কটি বিসিএসের নিয়োগপ্রক্রিয়া এখন ঝুলে আছে। এর মধ্যে ৪৪তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা স্থগিত। কবে শুরু হবে কারও জানা নেই। ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছিল।

৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার ফলাফল এখনো প্রকাশ করা হয়নি। ২০২২ সালের ৩০ নভেম্বর ৪৫তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল। অন্যদিকে ৪৬তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষাই এখনো হয়নি। ২৮ আগস্ট এ পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর এই বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি হয়েছিল।

প্রতিবছরের নভেম্বরে নতুন বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের কথা। সেই হিসাবে নভেম্বরে বা ডিসেম্বরে ৪৭তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হলে পিএসসির কাজের তালিকায় আরও একটি বিসিএস যুক্ত হবে। এই বিসিএসগুলোর নিয়োগ কবে নাগাদ কত বছরে শেষ হবে, তা নিয়ে ঘোর অনিশ্চয়তায় হাজারো প্রার্থী।

গত কয়েকটি বিসিএসের ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে আবেদন ও প্রিলিমিনারি পরীক্ষা গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশে ছয় মাস সময় লাগছে। এরপর লিখিত পরীক্ষা নিয়ে সেই পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতেই এখন এক থেকে দেড় বছর লেগে যাচ্ছে। এরপর মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে ফল প্রকাশ করতে লাগছে আরও ছয় মাস। এরপর যাচাই–বাছাই করে গেজেট প্রকাশ করতে লাগছে ছয় মাস থেকে এক বছর। অর্থাৎ প্রতিটি বিসিএসে লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতেই গড়ে এক বছর বা তারও বেশি লেগেছে এবং দীর্ঘসূত্রতার বড় কারণ এখানেই।

BCS Recruitment Process

পিএসসির ভাষ্য অনুযায়ী, ৩৮তম বিসিএস থেকে দুজন পরীক্ষক বিসিএসের খাতা মূল্যায়ন করেন, ফলে একটি বড় সময় এখানেই চলে যায়। আবার দুই পরীক্ষকের মধ্যে ২০ শতাংশ বা এর অধিক নম্বরের পার্থক্য হলে তৃতীয় পরীক্ষকের কাছে যায়। ফলে সময় লাগে আরও বেশি। এই যেমন ৪১তম বিসিএসে ১০ হাজারের বেশি খাতা তৃতীয় পরীক্ষক দেখেছেন। ফলে সময় বেশি লাগছে।

৪১, ৪৩, ৪৪, ৪৫—প্রতিটি বিসিএসেই লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশে এক বছরের বেশি সময় লেগেছে। এখন প্রশ্ন হলো, পরীক্ষকের অবহেলার দায় কেন পরীক্ষার্থীরা নেবেন? আর এ সমস্যা সমাধানের জন্য এমন কোনো পদক্ষেপ কি নেওয়া হয়েছে, যাতে ভবিষ্যতে সময় কমবে? সমাধান যে হয়নি, তার প্রমাণ মেলে ৪১–এর পরের সব কটি বিসিএসে।

সমস্যার সমাধানে পিএসসি পরীক্ষক ও নিরীক্ষকদের খাতা দেখার জন্য ১০-১৫ দিন বা এক মাসের সুনির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিতে পারে। পিএসসিকে মনে রাখতে হবে, কয়েক লাখ ছেলে–মেয়ের পরীক্ষা নিয়ে তিন মাসে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা যায়। তাহলে কোন কারণে ১০-১৫ হাজার ছেলে–মেয়ের লিখিত পরীক্ষার ফল দিতে তিন মাসের বেশি লাগবে? বিশেষ করে এক বছরের বেশি সময় কখনোই কাঙ্ক্ষিত নয়। দীর্ঘসূত্রতা কমাতে হলে লিখিত পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের এই সময় কমাতেই হবে।

BCS Recruitment Process

আরেকটি বিষয়, বাংলাদেশে ২৬টি ক্যাডার রয়েছে। এর মধ্যে জেনারেল, টেকনিক্যাল আর উভয় ক্যাডার আছে। এক শিক্ষা ক্যাডারেই অসংখ্য বিষয়। ফলে নিয়োগে সময় বেশি লাগে। এতগুলো ক্যাডার একসঙ্গে রাখার প্রয়োজন আছে কি না, ভাবতে হবে। মৌখিকেও নম্বর কমাতে হবে।

চূড়ান্ত ফল প্রকাশের পর যোগদানে বিলম্বের আরেকটি বড় কারণ পুলিশ যাচাই। লাখ লাখ প্রার্থীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে একজন প্রার্থী যখন প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক শেষ করে চূড়ান্ত উত্তীর্ণ হন, তখন তাঁর রাজনৈতিক রং খোঁজার চেষ্টা ও নিয়োগে দীর্ঘসূত্রতা অনাকাঙ্ক্ষিত। কারও বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা না থাকলে দ্রুত গেজেট প্রকাশ করা উচিত। জনপ্রশাসন ও পিএসসিসহ সরকারের বিষয়গুলো নিয়ে ভাবতে হবে।

BCS Recruitment Process

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ভারতের সিভিল সার্ভিস সবচেয়ে পুরোনো। ভারতের কেন্দ্রীয় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা নেয় ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন। প্রতিবছরের জুনে তারা প্রিলিমিনারি পরীক্ষা নেয় এবং আগস্টে ফল প্রকাশ করে। এরপর অক্টোবরে লিখিত পরীক্ষা এবং জানুয়ারিতে ফল প্রকাশিত হয়। উত্তীর্ণদের মার্চে মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে মে মাসে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা হয়। যাঁরা চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ হন, সেপ্টেম্বর থেকেই তাঁদের চাকরির মূল প্রশিক্ষণ শুরু হয়। অথচ বাংলাদেশে একেকটা বিসিএসের প্রক্রিয়া শেষ করতেই তারুণ্যের চার বছর বা আরও বেশি সময় লাগছে, যা গোটা বিশ্বে রেকর্ড। নিয়োগে স্বচ্ছতার পাশাপাশি এই দীর্ঘসূত্রতা কমাতেই হবে।

  • শরিফুল হাসান কলামিস্ট ও বিশ্লেষক।

আরো পড়ুন।

Leave a Comment